সময় ২০১৬ সাল, অক্টোবর মাস। এ বছরের স্টাডি ট্যূর এর জন্য সবার খুবই এক্সাইটমেন্ট। সবার সিদ্ধান্ত হল সুন্দরবন ও বাগেরহাট ষাট গম্বুজ এই দুই জায়গা পরিদর্শন করা সেই সাথে আমি আর একটা স্থান ঠিক করলাম সেটা হল চন্দ্রমহল । আমার খুব কাছের দুজন বন্ধু যেতে চাইল। ভালই হল অনেকদিন পর বন্ধুদের সাথে ঘোরা হবে। মহিলা কলেজ থেকেও ৭-৮ জন যাওয়ার কথা বলল। মেয়েদের সংখ্যা কম দেখে নেওয়ার পক্ষে ছিলাম না। তারপরও যেহেতু যেতে চাচ্ছে অনেক রিকুয়েস্ট করল। সবার বাসায় কথা হল। আর আমি যেখানে আছি সেখানে আমার স্টুডেন্টরা সব থেকে নিরাপদ।
যাইহোক গাড়ি ঠিক হল। বাসের মধ্যে আমরা লটারি করব। তার জন্য ১০ টা পুরস্কার আছে। তবে মজার বিষয় হল অনেক বড় বড় সুন্দর সুন্দর র্যাপিং করা গিফট্ বক্স যেখানে অদ্ভুত কিছু গিফট্ থাকবে। একজনকে সাথে নিয়ে সবগুলো র্যাপিং করে ফেললাম। কেউ জানল না ওগুলোর মধ্যে কি আছে। তবে একটার কথা না বললেই না। একটা গিফট বক্স ছিল নামকরা গিয়াস মিস্টির প্যাকেট । তবে তার মধ্যে দেওয়া হয়েছিল টয়লেট টিস্যু।
এবার যাত্রা শুরু। পরিকল্পনা ছিল ভোর ৫ টায় রওনা দিয়ে ১২ টার মধ্যে সুন্দরবন তারপর ফিরে এসে চন্দ্রমহল ও ষাটগম্বুজ এবং সেখানে ওখানকার সব থেকে ভাল রেসটুরেন্ট এ খাবার অর্ডার করে রাখাছিল সেখানে দুপুরের লাঞ্চ।
তবে এ পরিকল্পনায় বাধা আসল। সবার কথা তারা রাতে রওনা করবে কারন রাতে রুপসা ব্রিজ দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগে। এদিকে বাস এর স্টাফরাও চাপাচাপি করল যে রাতে রওনা দিয়ে ভোরে পৌছায় যাবে তারপর সারাদিন আরামে ঘোরা যাবে। যুক্তি ঠিক ছিল। কিন্তু আমি বিপক্ষে ছিলাম যেহেতু মহিলা কলেজ এর স্টুডেন্ট ছিল তাদের নিয়ে রাতে রওনা করাটা ঝুকিপূর্ণ বা সবার বাড়ি থেকে হয়ত রাজি হবে না। যাই হোক ছেলেরা অনেক জোর যবরদস্তি করল যে তারা রাতেই যাবে। অবশেষে বাধ্য হয়ে মেয়েদের বাড়িতে কথা বললাম। অবশ্য সবার বাড়ি থেকেই অনুমতি দিল। শেষমেশ রাত ১২ টার সময়ই যাত্রা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ঠিক হল।
সারাদিন প্রচন্ড দৌড়াদৌড়ি, গিফট বক্স, নাস্তা সবকিছু গোছানো বাজার করা । এসব করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেল। সেলুনে গেলাম শেইভ করার জন্য ১০.৩০ টার দিকে। এদিকে ১২ টায় রওনা হতে হবে। হাতে সময় খুব কম। সেলুন থেকে দ্রুত ফিরে আসার জন্য রিকশাতে উঠলাম। তবে অন্য সময়গুলোতে কোথাও যাওয়ার তেমন একটা উত্তেজনা থাকে এবার তেমনটা ছিল না। কেমন একটা শঙ্কা কাজ করছিল মনের মধ্যে। বাসায় আসার সময় রিকশা যখন মার্কাজ মসজিদ পার হল তখন হঠাৎ রিকশা চালক ডান পাশে মোড়ের আগেই একটা প্রাচির ভাঙা জমির মধ্যে ভুল করে রিকশা চালিয়ে দিল। গাছের সাথে রিকশা ধাক্কা লাগতে যেয়েও কোনরকম বেঁচে গেল সেই সাথে ছিল জঙ্গল। যাই হোক আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলাম। তবে একটা খটকা লাগল মনের মধ্যে যাত্রার শুরুতেই বাধার সম্মূখীন হলাম ! জানিনা কি ঘটতে চলছে। এদিকে রিকশা চালক বিলাপ করতে থাকল “ এরকম তো কোনদিন হয় নাই !! ফাঁকা রাস্তায় এভাবে জঙ্গলের মধ্যে রিকশা চালাই দিলাম। নিজেও কিছুই বুঝছিনা। কিসের আলামত কি জানি। ” বাসায় পৌছালাম। সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। বললাম সবকিছূ। সবকিছু গুছিয়ে নিলাম সবাই। রাত ১২ টার আগেই সবাই পৌছায় গেল ফায়ার সার্ভিস মোড়ে। ওখান থেকেই বাস ছাড়বে।
ঠিক রাত বারোটার সময় আমাদের বাস স্ট্রাট হল। সবার মধ্যে অনেক উত্তেজনা বিরাজ করছে সুন্দরবন মানেই একটা অন্যরকম অনুভূতি। সেই সাথে আছে ট্রলারে করে সুন্দরবনে যাওয়া যেখানে নদী মিলিত হয়েছে রুপসা ও পশুর। এক কথায় খুবই অন্যরকম একটি স্টাডি টুর হতে যাচ্ছে এবার। বাসের মধ্যে সবার সাথে কথাবার্তা বলা শেষ করে কিছু ছবি তুলে চলে গেলাম একদম পিছন লাইনে। সেখানে বসে আমরা কয়জন গিটার বাজাব গান করব সারা রাস্তা এই ছিল আমাদের পরিকল্পনা। এভাবেই আমরা চুয়াডাঙ্গা পার হয়ে গেলাম তারপর ঝিনাইদহ পার হলাম। সবাই বাসের মধ্যে এক প্রকার ঘুমিয়ে গিয়েছে। শুধু আমরাই সাত আট জন পিছনে জেগে আছি আর আমি একদম সিটের মাঝখানে বসলাম যেন সরাসরি সামনের দিকটা দেখতে পারি সামনে কি হচ্ছে না হচ্ছে যেহেতু রাতের যাত্রা যে কোন কিছুই ঘটতে পারে আর তাছাড়া যশোর ঝিনাইদা রোডের মতো শুনশান নিরব রাস্তা খুবই কম আছে। এমনিতেও এলাকাগুলো অনেকটা ভয়ংকর।
কালিগঞ্জ পার হলাম। যতটুকু মনে পড়ে ওখানে একটা তেল পাম্প ছিল সেটা পার হলাম। আমি গান গাইতে গাইতে হঠাৎ করে খেয়াল করলাম রাস্তায় একটা ট্রাক দাড়ানো আছে । যেহেতু পুরো রাস্তা ফাঁকা অনেক দূর থেকে দেখা যাচ্ছে। ট্রাক দাঁড়ানো দেখে আমার মনের মধ্যে একটা খটকা লাগলো কারণ রাস্তার ওই স্থানে ট্রাক দাড়ানোর কথা না আর তাছাড়া বহুবছর ছোটবেলা থেকেই আমি খুলনাতে যাওয়া আশা করি এই রাস্তা দিয়ে, মোটামুটি রাস্তাঘাট সবই চেনা। আমি ট্রাকের দিকেই তাকিয়ে থাকলাম গান গাওয়া বন্ধ করে । ড্রাইভার দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকটাকে ক্রস করল সে আসলে বুঝে উঠতে পারে নাই সামনে কি ঘটতে যাচ্ছে। যখনই ট্রাকটাকে ক্রস করল তখন সে সামনে যেয়ে দেখে বাস ট্রাকের বিশাল বড় একটা লম্বা লাইন এবং সে একটি ফাঁকা জায়গাতেই বাস নিয়ে যাওয়ার পর ফাঁদে পড়ে গেছে। এখান থেকে না পিছনে যাওয়া যাবে না সামনে যাওয়া যাবে। কয়েক মিনিটের মধ্যে মুহূর্তেই বাসার লাইট বন্ধ হয়ে গেল। অন্ধকার বাসের মধ্যে দুই তিনজন দৌড় দিয়ে আমার দিকে আসতে থাকলো একদম পিছনে। এরই মধ্যে আবার পুলিশের বাঁশি শোনা গেল দূরে। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। খুব দ্রুত আমার গিটার গিটারের বক্সে ঢোকানোর চেষ্টা করলাম কারণ আমার থেকে আমার গিটার কে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি সেটার কোন ক্ষতি হলে আমি সহ্য করতে পারবো না। এরই মধ্যে আবার দেখলাম দ্রুত গতিতে দৌড় মেরে দুইজন বাস থেকে নেমে পালালো। অনেকে ডাকাত বলে চিল্লিয়ে উঠলো সবাই । পুরো ঘটনা বিদ্যুৎ গতিতে কয়েকমিনিটের মধ্যে ঘটল। সবাইকে শান্ত করে আমরা কয়েকজন সামনে গেলাম এবং বাসের জানালা দরজা সাথে সাথে সব বন্ধ করে দিলাম। খুবই ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হলো। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশের একটা দল চলে আসলো দৌড়াতে দৌড়াতে। তখন আমি সামনে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম কি ঘটনা, সে বলল বাস থামার সাথেই একজন তার গালায় ধারালো অস্ত্র ধরেছিল। আর দুজন বাসের দরজা লাথি দিয়ে খুলে ফেলে অস্ত্র নিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে। আর সামনে যে স্টুডেন্ট বসেছিল সম্ভবত মুক্ত, সে ভয় পেয়ে পিছনে দৌড় দেয় আর ওর পিছনেই ডাকাত দুজনও দৌড় মারে। কিন্তু আল্লাহর ইশারায় কাকতালীয়ভাবে ওই মুহূর্তেই আবার পুলিশও চলে আসে এবং পুলিশের বাঁশি শোনার পরেই ডাকাতরা ইউটার্ন নিয়ে পালায়। কিছুক্ষণ পর আমরা কয়েকজন বাস থেকে নিচে নামলাম। এরই মাঝে আমাদের পিছন দিয়ে ট্রাক ছিল তার পিছনে আরো একটি গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ সব মাঠের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে এবং চারিদিক থেকে শুধু টর্চ লাইটের আলো দেখা যাচ্ছে। পুরো রাস্তা ভয়ংকর অন্ধকার রাস্তাতেও কোন লাইট নাই। এরই মাঝে পুলিশ আবার সামনের দিকে চলে গেল। আমরা সবাই বাসের মধ্যে ঢুকে সব বন্ধ করে বসে থাকলাম। পরে আবার সোনা গেল ওই ডাকাতরা পিছনের বাসে এসেও তখন ডাকাতি করেছে। এভাবেই অনেকক্ষণ পুলিশ আর ডাকাতের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকল। পুলিশ একজনকে ধরে নিয়ে আসল মাঠের ভিতর থেকে। তবে আবিস্কার হল সে ট্রাকের হেলপার, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছিল। বেচারা!! শান্তির কাজেও পুলিশি বাধা!!!
প্রায় এক ঘন্টা পর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে আমরা কয়েকজন সামনে গেলাম দেখার জন্য। প্রায় আধা কিলোমিটার লম্বা লাইন ১৫ থেকে ২০ টা বাস ট্রাক মাইক্রো দাঁড়িয়ে আছে। আসল ঘটনা হলো এই গাড়িগুলোতে আরো আধা ঘন্টা আগে ডাকাতি শেষ হয়ে গেছে এবং ডাকাতরা অপেক্ষা করছিল কোন যাত্রীবাহী বাস প্রবেশ করে কিনা। আর যেহেতু ডাকাতি আধা ঘন্টা আগে হয়ে গিয়েছে ও সেই খবর যখন থানাতে গিয়েছে যশোর থানা থেকেও তখন পুলিশ রওনা দিয়েছে আসার জন্য সম্ভবত ঘটনাটি বারো বাজারে এলাকার কাছাকাছি। আর যেই মুহূর্ত আমরাও স্পটে ঢুকেছি পুলিশ ও একই সময় ঢুকে গিয়েছে কয়েক মিনিটের মধ্যেই যার কারণেই আমরা কাকতালীয়ভাবে সেই সময় বেঁচে যাই। এবং বাসের মধ্যে ডাকাত ঢুকে পড়ার পরেও কিভাবে যেন আমরা সবাই বেঁচে গেলাম সবকিছু যেন স্বপ্নের মত। পুলিশ আসতে আর দশ মিনিট দেরি হলে বা আমরা যদি আর দশ মিনিট আগে পৌঁছাতাম তাহলে হয়তো আমরা সবাই সেদিন শেষ । সব থেকে বেশি ভয়ে ছিলাম যেহেতু বেশ কিছু মেয়ে ছিল বাসের ভিতরে না জানি কি হতো তাদের। আর তাদের শান্ত করাও খুব কঠিন কাজ ছিল প্রচন্ড ভয় পেয়েছিল সবাই। আমার ফ্রেন্ড ছিল একদম সামনে যার কাছে ছিল ডিএসএলআর ক্যামেরা। ডাকাতরা সবগুলো বাস ট্রাকের সবাইকে কমবেশি মারধর করেছিল এবং সবকিছু নিয়ে নিয়েছিল। লম্বা লাইন শেষ করে আমরা সামনে গিয়ে দেখলাম প্রায় ৫০-৬০ ফিট ব্যাস এর মোটা একটি গাছ পুরোটাই রাস্তার উপরে কেটে ফেলা। তার বিশাল বড় বড় ডাল সম্পূর্ণ রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যাইহোক কোন রকম আমরা আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলাম কিন্তু পিকনিকে তো আমাদের যেতে হবে লক্ষ্য তো এটাই। কিছুক্ষণ পরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসলো তারা গাছ কাটার ইলেকট্রিক করাত নিয়ে আসলো কয়েকটা। ডালগুলো প্রচন্ড মোটা কাটতে অনেক সময় লেগে গেল। কিন্তু ডাল সরানোর জন্য লোক পাওয়া গেল না। পরবর্তী আমি সালমান রোমান শিহাব সহ প্রায় ১০-১৫ জন গাছ সরানোর মিশনে নেমে পড়লাম পুলিশ আর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাথে। আমাদেরকে মূলত রাস্তা ক্লিয়ার করে আগে রওনা করতে হবে। এভাবেই কয়েক ঘন্টা আমরা সবাই কাজ করে সেই মোটা মোটা গাছের ডাল এবং গাছ সবকিছু সরাতে সক্ষম হলাম।
প্রায় ভোরের আলো উঁকি দিল। আমরা যাত্রা শুরু করলাম। যখন যশোর পৌছালাম তখন দেখলাম আবার রাস্তার মাঝখানে সাত আট জন লোক বড় বড় লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বুঝে উঠতে পারলাম না তার আবার কারা। তাদের দেখে মুক্ত আবার ভয়ে পিছনে দৌড় দিল । নাহ এবারের ডাকাত না এরা আসলে পাহারাদার। আকাশে প্রচন্ড মেঘ। একটাই চিন্তা ঠিকমতো পৌঁছাতে পারবো কিনা বৃষ্টির মধ্যে সবাই ঘুরতে পারবে কিনা। বৃষ্টির জন্য সবাই খুবই চিন্তায় পড়ে গেলাম। শেষমেষ যখনই আমরা মংলা পোর্টে পৌঁছালাম তখন বৃষ্টি অনেক কমে গেল।
আমরা ট্রলার পার হয়ে করমজল পিকনিক স্পটে চলে গেলাম। সেখানে কিছু ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটলো। আমরা অনেকেই ওয়াচ টাওয়ারে উঠলাম। সমস্যা হলে আমাদের পিছু পিছু কয়েকটা বানর ওয়াচ টাওয়ারে উঠে গেল। বানরগুলো কোনভাবেই আমাদের ওয়াচ টাওয়ার থেকে নামতে দিবে না। নামতে গেলেই খামচি দিতে যায়। আমার এক স্টুডেন্ট সোহান প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল। এমন অবস্থা হলো যে সে পাঁচ তলা ওয়াচ টাওয়ার থেকে লাফ দিবে। বানরের সাথে যুদ্ধ করার পরে অনেক কষ্ট করে আমরা ওয়াচ টাওয়ার থেকে নেমে পালাতে সক্ষম হলাম। সবাই দুইটা ট্রলারে উঠে গেছি। কিন্তু সমস্যা হল আমার ফ্রেন্ডসহ আরো দুজন ছিল ওরা ট্রলারের পনটুনের গেটের সামনে বানরের খপ্পরে পড়ল। প্রায় সাত আটটা বানর ওদের আটকিয়ে দিল। কোনভাবেই এদিকে আসতে দেবে না। আবার বানরের সাথে আবার যুদ্ধ শুরু। ওখানকার কেয়ারটেকার সহ আমরা কয়েকজন লাঠি নিয়ে বানরকে তাড়াতে গেলাম। কিন্তু বানরের সাথে পেরে ওঠা খুবই মুশকিল। প্রায় ১০-১৫ মিনিট পরে কোনোভাবে তারা পালাতে সক্ষম হলো এবং আমাদের ট্রলারে এসে পৌঁছালো। আমরা আবার মংলা পোর্টে চলে আসলাম ট্রলার পার হয়ে এবং আমাদের বাসে উঠলাম।
আর তখনই ঝুম ঝুম করে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল। তখন শুধু ভাবছিলাম আল্লাহ কি তাহলে আমাদের ঘোরার জন্য একটু সময় দিয়েছিল।
এর মধ্যে বাধল অন্য এক বিপত্তি। ২ ধান্দাবাজ এসে বলে গাড়ি পার্কিং এর টাকা দিতে হবে ১৫০০ টাকা। আরেভাই মগের মুল্লুক নাকি। না আছে রশিদ না আছে সাইনবোর্ড। আমার সাথে ধান্দা করে আজ পর্যন্ত কেউ জিতে নাই। ওদরে সাথে প্রায় ১৫-২০ মিনিট বাকবিতন্ডা। শেষমেশ ৪০০ টাকা দিলাম। বুঝলাম আমার বাসের ড্রাইভারও ওদের সাথে জড়িত।
যাইহোক এভাবে আমরা চন্দ্রমহলে ঘুরে ষাট গম্বুজে চলে গেলাম। সেখানে সবাই দুপুরে লাঞ্চ শেষ করে আবার বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রাস্তায় আসার সময় লটারি হল সেখানে সবাই কমবেশি গিফট পেয়েছিল। তবে মজার বিষয় হচ্ছে বেশিরভাগ গিফটের বক্সে ছিল আলু বেগুন পটল শশা এসব। কেউ ভাবতেও পারিনি যে এরকম অদ্ভুত জিনিসপত্র থাকবে ওর মধ্যে। এসবের মাস্টার মাইন্ড ছিলাম আমি। আমরা যশোর পার হয়ে আবার কালীগঞ্জের কাছাকাছি চলে আসলাম।মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে অনেক আগেই। হঠাৎ করে বাসের টায়ার পাংচার। কপাল এত খারাপ আমরা ভাবতেও পারিনি যে, যেই লোকেশনে আমরা ডাকাতের খপ্পরে পড়ে গিয়েছিলাম তার একটু আগে পরেই আবার টায়ার পাংচার হয়ে গেল বাসের। অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। অনেকক্ষণ ধরে চাকা ঠিক করা হলো তারপর আবার রওনা হল। এভাবেই আমরা সবাই চুয়াডাঙ্গার কাছাকাছি চলে আসলাম হঠাৎ করে দেখলাম ড্রাইভারের ঝিম ধরেছে ঘুম ঘুম আসছে। সে ঠিকমতো গাড়ি চালাতে পারছিল না অনেক কষ্ট করে মেহেরপুর পর্যন্ত আসলো এবং রাত প্রায় ১১ টার সময় আমরা মেহেরপুরে পৌছালাম। সত্যি বলতে সম্পূর্ণ দিনটাই ছিল সবকিছুই কেমন অস্বাভাবিক। এরকম অস্বাভাবিক ঘটনার মুখোমুখি কয়জন হয়েছে আমার জানা নেই। একটা অন্যরকম স্টাডি ট্যুর যা সারা জীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে। তবে আল্লাহর রহমতে আমরা সবাই শেষমেষ নিরাপদে বাসায় ফিরে আসতে পেরেছিলাম এটাই শুধু একমাত্র প্রাপ্তি।
মন্তব্য